সবজি চাষের সাধারণ নিয়মাবলি

এসএসসি(ভোকেশনাল) - ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

সবজি চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন

শাক সবজি ভেদে শাক সবজি চাষের জন্য যথেষ্ট আলো বাতাসের সুবিধা আছে এমন জমি নির্বাচন করা উচিত। বিশেষ করে ফল জাতীয় সবজির (বেগুন, ঢেঁড়শ, টমেটো, কুমড়া, শশা, পেঁপে, মরিচ, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, কাঁকরোল, বরবটি, শিম ইত্যাদি) জন্য আলোর দরকার হয়। শাক ও মূল জাতীয় সবজি (ডাঁটা, পুঁইশাক, কলমিশাক, সিলারি, লেটুস, বিট, গাজর, মূলা, শালগম) কিছু কম আলোতে এবং কচু, মেটে আলু, গাছ আলু ইত্যাদি সবজি ছায়াতেও ভালোভাবে জন্মাতে পারে।

সারা বছর শাক সবজি চাষাবাদের জন্য সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন উঁচু জমি সুবিধাজনক। পানি সেচ ও নিকাশের জন্য জমি মোটামুটি সমতল ও একদিকে কিছুটা ঢালু থাকলে ভালো হয়। সবজি বাগান এমন জমিতে হওয়া উচিত যেখানে কাছাকাছি পানির উৎস আছে এবং সহজেই পানি সেচ ও নিকাশ করা যায়। সবজি বাগানে ছায়া যত কম পড়বে ততই ভালো। শাক সবজির বাগান যদিও সাধারণত বাড়ির আশে পাশেই করা হয়ে থাকে এবং সহজে দেখাশোনা করা যায়। তবে সবজির চাহিদা ও উৎপাদনের উদ্দেশের ওপর ভিত্তি করে জমির স্থান নির্বাচন করা উচিত। যেমন- গার্হস্থ্য সবজি বাগান, বিক্রয়মূলক সবজি বাগান, সৌখিন সবজি বাগান, বাহির বাণিজ্য বাগান ইত্যাদি।

গার্হস্থ্য সবজি বাগান

এ ধরনের সবজি বাগানের জন্য যে কোন ধরনের যে কোন আকারের খণ্ড জমি হলেই চলে। এ ধরনের সবজি বাগান সাধারণত ছোট আকারের হয়ে থাকে। যতদূর সম্ভব বাড়ির আশে পাশে পতিত বা ফঁকা স্থানগুলোতে এ বাগান করা হয়। এক্ষেত্রে পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য স্বল্প সময়ে বেশি পরিমাণে জন্মে এমন ধরনের সবজি নির্বাচন করে চাষ করা হয়। এ বাগানে কী কী শাক সবজি জন্মানো হবে তা পরিবারের লোকজনদের আবার পছন্দের ওপর নির্ভর করে। বাড়ির আশে পাশের জমিতে বাগান করা হয় বলে পরিবারের মেয়েরা এ ধরনের বাগানের সুযোগ বুঝে কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। এছাড়া সবজি সংগ্রহও মহিলারাই করে থাকে।

শাক সবজি যতদূর সম্ভব টাটকা অবস্থায় খাওয়া উচিত। গার্হস্থ্য সবজি বাগান হতে বেশি ফলপ্রসুভাবে টাটকা অবস্থায় পছন্দমত শাক সবজি সহজে সংগ্রহ করা যায়। সারা বাংলাদেশে প্রায় ১.৫ কোটি খানা আছে এবং প্রতি খানাতেই কিছু কিছু করে সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এতে জমির নিবিড় ব্যবহার, পরিবারের বিভিন্ন জনের শ্রমের ব্যবহার হয় এবং পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।

সৌখিন সবজি বাগান

অনেকে টমেটো, বেগুন, মরিচ, শিম বা কপিজাতীয় ২-৪টি গাছ বাসার সামনে, টবে, ড্রামে বা ছাদে লাগায় নিতান্তই শখের বসে। অবসর সময়ে, কাজের ফাঁকে বা বিকেলে গাছের যত্ন নিতে আনন্দ বোধ করে এবং গাছে ২-৪টা ফল ধরলে খুব আনন্দ পায়। অনেকে সৌখিন বাগানকে গার্হস্থ্য সবজি বাগান বলে থাকে।

বাণিজ্য সবজি বাগানঃ বিদেশের চাহিদা মোতাবেক বিশেষ ধরনের সবজি নির্দিষ্ট এলাকায় উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে সে ধরনের সবজি জোন গড়ে উঠেনি। তবে এ ধরনের বাগান তৈরি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

বিক্রয়মূলক সবজি বাগান 

বাজারের চাহিদা এবং বেশি মূল্য পাওয়ার ওপর জোর দিয়ে সাধারণ এ ধরনের বাগান করা হয়। আগেকার দিনে যে সমস্ত বিক্রয়মূলক সবজি বাগান ছিল তা শহরের আশে পাশে সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু বর্তমানে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণসহ বিভিন্ন কারণে শহর বা বাজার হতে অনেক দূরবর্তী স্থানেও শাক সবজি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। যেহেতু রাস্তাঘাট ও যানবাহনের সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জনগণের রুচি পরিবর্তন ও চাহিদা বাড়ছে, অধিক লাভজনক ও নতুন নতুন আকর্ষণীয় সবজি প্রবর্তিত হচ্ছে।

সৌখিন সবজি বাগান

অনেকে টমেটো, বেগুণ, মরিচ, শিম বা কপিজাতীয় সবজির ২-৪টি গাছ বাসার সামনে বা টবে বা ড্রামে বা ছাদে লাগায় নিতান্তই শখের বসে। অবসর সময়ে বা কাজের ফাঁকে বা বিকেলে গাছের যত্ন নিতে আনন্দ বোধ করে এবং গাছ বড় হলে ২-৪টা ফল ধরলে খুব আনন্দ পায়। অনেকে সৌখিন বাগানকে গার্হস্থ্য সবজি বাগান বলে থাকে।

মাটির বৈশিষ্ট্য বুঝে সবজি চাষের জন্য জমি ও মাটি নির্বাচন

মাটির বৈশিষ্ট্যঃ জমি মাটি দ্বারা গঠিত যা জৈব পদার্থযুক্ত। গাছপালা সে মাটি হতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। মাটি একটি জীবন্ত ও পরিবর্তনশীল পদার্থ। মাটির বৈশিষ্ট্য অনুসারে সকল মাটিকে তিনভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা- (ক) ভৌতিক (খ) রাসায়নিক ও (গ) জৈবিক।

(ক) ভৌতিক- মাটি বিভিন্ন প্রকার কণার সমন্বয়ে গঠিত। বিভিন্ন প্রকার কণার পরিমাণের ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে মাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এতে মাটির বুনট, সংযুক্তি, ঘনত্ব, মাটিতে রন্ধতা, মাটির রং, দৃঢ়তা ও কমনীয়তা, তাপমাত্রা, পানি ধারণক্ষমতা বৈশিষ্টগুলো থাকবে। বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ- (১) পাথুরে মাটি (২) বেলে মাটি (৩) পলি মাটি (৪) কাদা মাটি (৫) দোঁআশ মাটি।

(১) পাথুরে মাটি- পাথর গুড়ি, কাঁকর ও বালির সমন্বয়ে এ মাটি গঠিত। এ মাটি চাষ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও কৃষি কাজের জন্য অনুপযোগী। এর কণাগুলো খালি চোখে দেখা যায় । 

(২) বেলে মাটি- শতকরা ৭০ ভাগ বা তার অধিক বালিকণাযুক্ত মাটি। নদীর চর, চরাভূমি, মরুঅঞ্চল এবং বৃষ্টিবহুল এলাকায় এরূপ মাটি দেখা যায়। এ মাটি সহজে কর্ষণ করা যায়; কিন্তু অনুর্বর ও পানি ধারণ ক্ষমতা খুবই কম। এ মাটিতে আগাম শীতকালীন সবজি ও মূলজাতীয় ফসল ভালো জন্মে। এর কণাগুলো খালি চোখে দেখা যায়। 

(৩) পলি মাটি- নদীর তীরবর্তী ও প্লাবিত অঞ্চলে এ ধরণের মাটি বেশি পাওয়া যায়। এ মাটি উর্বর, তাই সব ধরনের সবজিই জন্মানোর উপযোগী। এর কণাগুলো অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ভালোভাবে দেখা যায় । 

(৪) কাঁদা মাটি- শতকরা ৪০-৫০ ভাগ কর্দম কণাযুক্ত মাটি। এ মাটিতে পলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে এবং পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি। ভিজা অবস্থায় খুবই নরম ও আঁঠালো প্রকৃতির থাকে, কিন্তু শুকালে খুবই শক্ত হয়। সবজি চাষের জন্য এ মাটি খুব বেশি সুবিধাজনক নয়। এর কণাগুলো অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও দেখতে কষ্টকর হয়।

(৫) দোঁআশ মাটি শতকরা ৭০ ভাগের কম ও ২০ ভাগের বেশি বালিকণা বিশিষ্ট মাটি। কোন কোন ক্ষেত্রে বালিকণার পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত নেমে গেলেও মাটি দোঁআশ হতে পারে। তবে আদর্শ দোঁআশ মাটিতে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বালিকণা এবং অর্ধেক পরিমাণ পলি ও কদমকণার মিশ্রণ থাকে।

দোঁআশ মাটিতে বালি ও কর্দম কণার কম বেশির অনুপাত অনুসারে এ মাটিকে আবার দুভাগে ভাগ করা হয়। 

যথা- (ক) বেলে দোঁআশ ও (খ) এঁটেল দোআশ ।

ক) বেলে দোঁআশ- বেলে দোঁআশ মাটিতে শতকরা প্রায় ৪৫ ভাগ হতে ৬৫ ভাগ পর্যন্ত বালি থাকতে পারে । 

(খ) এটেল দোঁআশ- এটেল দোআশ মাটিতে শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ কর্মকণা এবং একই পরিমাণ পলি কণা থাকতে পারে।

এছাড়া পলি কণার তারতম্য অনুসারে দোঁআশ মাটিকে আবার দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- (১) পলি দোঁআশ ও (২) পলি এঁটেল দোঁআশ ।

(১) পলি দোঁআশ- পলি দোঁআশ মাটিতে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ পলি ও ২০ ভাগ কর্দম কণা এবং 

(২) পলি এঁটেল দোঁআশ- এ মাটিতে শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ বালি এবং ৩০ ভাগ কর্দম কণা থাকে । দো-আশ মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি এবং এর অভ্যন্তরে বেশি পরিমাণে বায়ু চলাচল করতে পারে। তাই এ মাটি গভীর তর পর্যন্ত রসালো থাকে। এ মাটি ঝুরঝুরে প্রকৃতির ও উর্বর হয়ে থাকে তাই এ মাটিতে যে কোন ফসল ভালোভাবে জন্মানো যায় ।

খ) রাসায়নিক- রাসায়নিক বিশ্লেষণ দ্বারা মাটির উর্বরতা এবং মাটিতে পুষ্টির অভাব আছে কি না তা জানা যায় । সাধারণত দুই ধরনের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা হয়। যথা- মাটিতে মোট পুষ্টির পরিমাণ ও গাছের খাদ্য হিসেবে উপযোগী প্রয়োজনীয় পুষ্টি। মাটির রাসায়নিক উপাদান তথা গাছের পুষ্টি উপাদানগুলো যথা- নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, বোরণ, কপার, জিংক, আয়োডিন, মলিবডেনাম ইত্যাদি। এগুলো মাটির মধ্যে উপযুক্ত পরিমাণে থাকা দরকার; যেহেতু শাক সবিজর স্বাভাবিকভাবে জন্মানোর জন্য এগুলো প্রয়োজন। এই উপাদানগুলো উপযুক্ত পরিমাণে না থাকলে গাছ গাছড়ার বৃদ্ধিতে নানা ধরনের অসুবিধা হয়। উল্লিখিত উপাদানগুলোর মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিংক গাছের জন্য বেশি পরিমাণে দরকার হয়। তাই সুষ্ঠুভাবে ফসল ফলানোর জন্য এগুলো জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। তবে অন্যান্য উপাদানগুলো খুব অল্প পরিমাণে দরকার হয় এবং মাটিতে যে পরিমাণে আছে তাতেই ফসলের প্রয়োজন মিটে যায়। তবে সারা বছর ঘন ঘন ফসল চাষের ফলে অন্যান্য উপাদানগুলোর ঘাটতিও মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে।

মাটিতে হাইড্রোজেন আয়রনের তারতম্যের ওপর নির্ভর করে মাটি অম্ল বা ক্ষার হয়। শস্য উৎপাদন এই অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের (পি.এইচ মানাঙ্ক) ওপর নির্ভর করে। এই অম্লত্ব বা ক্ষারত্বকে পি.এইচ মানাঙ্ক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। পি.এইচ-এর নিরপেক্ষ মানাঙ্ক ৭। এর নিচের মানাঙ্ক অম্ল এবং উপরের মানাঙ্ক ক্ষার। নিরপেক্ষ মানাঙ্ক হতে অম্ল বা ক্ষারের মান যত দূরে হবে মাটি ততবেশি অম্ল বা ক্ষার হবে। বিভিন্ন শাক সবজির চাষ উপযোগী পি.এইচ মানাঙ্ক সারণিতে দেয়া হলো।

অম্লমাটি- যে মাটির পি.এইচ মানাঙ্ক ৭ এর চেয়ে কম থাকে তাকে অম্লীয় মাটি বলে। মাটিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বা চুনের অভাব হলে বা জৈব পদার্থ বেশি হলে মাটি অম্লীয় ভাবাপন্ন হয়। উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির পানির সাথে চুন মাটির অভ্যন্তরে চুয়ায়ে যায় । এর ফলেও মাটিতে অম্লীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া এমোনিয়াম সালফেটজাতীয় সার বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে এবং বৃষ্টিপাত কম হলে মাটিতে অম্লত্ব সৃষ্টি হয়। শাকসবজি সাধারণত অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মে।

ক্ষারীয় মাটি- যে মাটির পি.এইচ মানাঙ্ক ৭ এর উপরে থাকে তাকে ক্ষারীয় মাটি বলে। কোন মাটিতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা না থাকলে এবং দীর্ঘদিন ধরে বাষ্পীয়ভবন হলে সেখানে লবণাক্ততা ও ক্ষারীয় অবস্থার সৃষ্টি হয় । এ ধরনের মাটিতে লৌহের অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ক্ষার সহিষ্ণু ফসল ছাড়া অন্য ফসল ভালোভাবে জন্মে না । মাটির পি.এইচ মানাঙ্ক নিরপেক্ষ করার জন্য চুন প্রয়োগের পরিমাণ সারণিতে দেওয়া হলো মাটির রাসায়নিক বিক্রিয়ার ভিত্তিতে প্রধান বিক্রিয়ার শ্রেণি।

অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব সংশোধনের উপায়

 

অম্লীয় মাটি

 

ক্ষারীয় মাটি

১.পানি নিকাশ ব্যবস্থা ও সেচের পানির উন্নয়ন১.পানি নিকাশের ব্যবস্থা করা
২.চুন বা ক্যালসিয়াম প্রয়োগ২.পাবন সেচের দ্বারা জমি ধৌত করা
৩.উপযুক্ত শস্যচক্র অনুসরণ৩.জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জিপসাম বা ক্যালসিয়াম সালফেট ব্যবহার করা
৪.কাঠের ছাই প্রয়োগ, জৈব সার প্রয়োগ, সুষম মাত্রার সারের ব্যবহার৪.মাটির উপরিভাগে খড়কুটার মালচিং দ্বারা পানির বাষ্পীভবন রোধ করা
৫.মাটিতে চুন প্রয়োগের একমাসের মধ্যে গোবর, খৈল, ইউরিয়া ব্যবহার না করা এবং বীজ/চারা রোপণ বা বপন না করা৫.জমির উপরিভাগের মাটি ৫-১০ সে.মি. গভীর করে অপসারণ করা

মাটি যত ভারী হবে চুনের পরিমাণ তত বেশি লাগবে। দোঁআশ বেলে মাটির চেয়ে এঁটেল মাটিতে চুন প্রয়োজন প্রায় দ্বিগুণ । কোন মাটির অম্লমান ৬.০ থেকে ৬.৫-এ বাড়াতে যে পরিমাণ চুন প্রয়োজন, অম্লমান ৪.৫ থেকে ৫.০ -তে উন্নীত করতে প্রায় ৩ গুণ বেশি চুন প্রয়োজন ।

গ) জৈবিক- মাটিতে অনেক প্রকার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জীবাণু আছে। যথা- নানা রকম ব্যাকটেরিয়া, মোল্ড, ইষ্ট, প্রটোজোয়া এবং ফানজাই । এই সমস্ত জীবাণুসমূহের রাসায়নিক কার্যাবলির ফলে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ অংশ পঁচে জৈব সারে রূপান্তরিত হয়। কতকগুলো ব্যাকটেরিয়া শিম বা ডাল জাতীয় শস্যের শিকড়ে বাতাস হতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে জমা করে। কতগুলো ব্যাকটেরিয়া এমোনিয়া এসিডকে এমোনিয়াতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। কিছু কিছু গাছপালা কেবল নাইট্রোজেন এমোনিয়া রূপে থাকলে তা গ্রহণ করতে পারে।

বাংলাদেশে সবজি চাষের জমির অবস্থা

বাংলাদেশের সবজি উৎপাদন পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গেলে সবজি চাষের আওতায় জমির পরিসংখ্যান জানা দরকার। তবে সবজি চাষের আওতায় জমি ও উৎপাদনের সঠিক তথ্য নিরূপণ করার খুব কঠিন। কারণ দু'একটি ফসল ছাড়া প্রায় ফসলই ব্যাপকভাবে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ করা হয় না। যেমন- তরমুজ, আলু, গাজর, , শিম ইত্যাদি ।

তাছাড়া বাংলাদেশে জমির আইল ও বসতবাড়ির এলাকায় জন্মানো সবজির পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন। তবুও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে জমির ব্যবহার ও সবজি চাষের পরিসংখ্যান সারণিতে দেওয়া হলো ।

সারণিঃ বাংলাদেশে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে জমির ব্যবহার

বাংলাদেশে সাধারণত ১৫-২৮ লক্ষ টন খাদ্য ঘাটতি বিরাজ করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এর পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। খাদ্য বলতে আমরা সাধারণত দানা জাতীয় শস্যকে বিবেচনা করে থাকি । বর্তমানে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ায় ও সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে দানাজাতীয় খাদ্যের সাথে সবজি ও ফসলের ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে দানাজাতীয় শস্যের (ধান ও গম উৎপাদন, ঘাটতি এবং আমদানির হিসেব নিচে সারণিতে দেয়া হলো।

সারণি : বাংলাদেশে ধান ও গমের উৎপাদন ঘাটতি এবং আমদানির পরিমাণ ।

আমাদের দেশে শাকসবজি অপেক্ষা দানাজাতীয় শস্যের হেক্টর প্রতি ফলন অনেক কম । এছাড়া খাদ্যমানের দিক থেকেও সবজির মান অনেক উঁচুতে। কেননা প্রায় সকল সবজিতেই মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এমন অনেক সবজি আছে যেগুলো দানাজাতীয় শস্য উৎপাদন সময়কালের মধ্যে ২-৩ বার উৎপাদন করা সম্ভব হয় । যেমন- ধান বা গম উৎপাদন সময়ের মধ্যে লাল শাক, মূলা শাক, ডাটা ২-৩ বার জন্মানো যায়। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে সহজে সবজি জন্মানোর উপযোগী । কিন্তু নানাবিধ কারণে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের চাইতে হেক্টর প্রতি গড় ফলন অনেক কম । সারণিতে কয়েকটি দেশের দৈনিক মাথাপিছু গড় শাক সবজি উৎপাদনের (গ্রাম) পরিসংখ্যাণ দেয়া হলো ।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শুধু দানাজাতীয় শস্য উৎপাদন করে সহজে পুষ্টি সমস্যা ও পুষ্টিযুক্ত খাদ্য ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই শাক সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করে পুষ্টি ঘাটতি ও দানাজাতীয় শস্যের উৎপাদন সমন্বয় করার চেষ্টা করা অপরিহার্য । বাংলাদেশ শাক সবজি ও দানাজাতীয় শস্যের গতিধারায় দেখা যায় যে দানাজাতীয় শস্যের চেয়ে শাক সবজির জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৯৪-৯৫ সনে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি একত্রে ৩৬২০০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়, যা মোট ফসলি জমির শতকরা ২.৬৯ ভাগ। ঐ একই সময়ে মোট ১০৫৬৬০০০ হেক্টর জমিতে দানাজাতীয় শস্য চাষ হয়, যা মোট ফসলি জমির শতকরা ৭৮.১০ ভাগ। বাংলাদেশে অধিকাংশ সবজি শীতকালে এবং সমতল ও উঁচু উভয় ধরনের জমিতে জন্মে থাকে। গ্রীষ্মকালে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণ এবং কম সংখ্যক সবজি চাষ করা হয়। এক হিসেবে দেখা গেছে প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ সবজি শীতকালে এবং ৩০ ভাগ সবজি গ্রীষ্মকালে জন্মে। নিচু এবং পাহাড়ি এলাকায় সবজি একেবারে চাষ হয় না বললেই চলে।

২০০৭-০৮ এ সবজি চাষ হয় ৬.৫১ লাখ হেক্টরে এবং দানাজাতীয় শস্য চাষ হয় ১৮২.২৯ লাখ হেক্টরে যা মোট আবাদি জমির যথাক্রমে ৮০% ও ৩%।

সবজি চাষের জমি তৈরি (কর্ষণ, বেড তৈরি, নালা তৈরি)

জমি তৈরির সুবিধাদি ও প্রস্তুত পদ্ধতি- সবজি চাষের জমি সমতল হওয়া বাঞ্চনীয়। তাতে পানি সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। চাষের পূর্বে অসমতল জমি ও পূর্ববর্তী ফসলের আইল, কেয়ারী, মাদা ইত্যাদি কেটে সমতল করে নিতে হয়। জো অবস্থায় পুনঃ পুনঃ চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঢেলামুক্ত ও ঝুরঝুরে করতে হয়। শাকের ক্ষেত্রে ২০-২৫ সেমি, এবং মূলজাতীয় সবজির ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ সেমি গভীর করে চাষ দিতে হয়। এ কাজ কোদাল, ট্রাক্টর বা রোটোভেটেরের সাহায্যে সহজে করা যায়। এক মৌসুমে জমি গভীরভাবে চাষ না করে কয়েক মৌসুমে অল্প অল্প করে গভীর করে চাষ দেয়া উচিত। একবারে গভীর করে চাষ করলে নিম্নস্তরের মাটি উপরে চলে আসে এবং সেক্ষেত্রে ভালো ফলন আশা করা যায় না। জমি যত ভালোভাবে তৈরি হয়, তত মাটির পানি ধারণ ও বায়ু চলাচল ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে গাছের শেকড় তত সহজে বিস্তার লাভ করে। ফলে গাছ অধিক খাদ্যোপাদান গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া মাটির স্বাভাবিক তাপ ও আর্দ্রতা বজায় থাকে। অপরদিকে অনিষ্টকারী কীট ও রোগ জীবাণু এবং আগাছা ইত্যাদি বিনষ্ট হয়। মাটির জীবাণুসমূহের মধ্যে বিশেষতঃ নাইট্রোজেনযুক্তকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা বেড়ে যায়।

জমি সঠিকভাবে ওলটপালট করে চাষের সময় রোদে উন্মুক্ত রাখতে হয়। মই দিয়ে জমি সমতল করে ঢেলা ভেঙে ঝুরঝুরে করতে হয়। আঁচড়া দিয়ে আগাছা টেনে পরিষ্কার করতে হয়। ভেজা অবস্থায় জমি চাষ দেওয়া ঠিক নয় । বিশেষ করে এঁটেল মাটি ভিজা অবস্থায় চাষ করলে ঢেলা ভাঙ্গা দুরহ হয়ে যায়। দোঁআশ মাটি কিছু ভিজা অবস্থায় চাষ করা গেলেও মাটি শুকানোর পূর্বে মই দেওয়া উচিত নয়। উল্লেখ্য যে চাষ ও মই দেওয়া জমি থেকে বৃষ্টি বা সেচের পরপর প্রায় ১৪% পানি বাষ্পীভূত হয় অথচ চাষহীন জমি হতে ৮০% পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়। তাই জমিতে রস সংরক্ষণের জন্য চাষের পর জোযুক্ত জমিতে মই দিতে হয়। জমিতে চটা তৈরি হলে তা ভেঙ্গে দিতে হয়। তাতে রস ধরে রাখতে পারে। সুতরাং জমি তৈরিকরণের সাথে মাটির তাপ ও রস সংরক্ষণ এবং সবজি আবাদের সাফল্য কতটা নির্ভরশীল তা সহজেই বোঝা যায়। জমি সমতল না হলে ঢাল হয়ে থাকলে ভূমি ক্ষয় বেশি হয় এবং পুষ্টি উপাদান চুয়ায়ে বা গড়ায়ে নিচু স্থানে চলে যায়। এতে জমি অনুর্বর হয়। জমি তৈরিতে শেষ চাষের পূর্বে মৌল সার ছিটিয়ে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।

কোন কোন সবজি চাষ ছাড়া করা যায়। মাটিতে আলু চাষ, মেটে বা গাছ আলু রোপণে জমি চাষের প্রয়োজন হয় না। যে জমিতে ফসলটি শেষ পর্যন্ত জন্মিবে সেখানকার মাটির পরিবেশ তার উপযোগী করে তৈরি করা প্রয়োজন। সাধারণ শস্য অপেক্ষা সবজির জমি উত্তমরূপে তৈরি করতে হয়। বেশির ভাগ সবজির চারা তৈরি করে চাষ করা হয়। চারা তৈরিতে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় এবং বীজতলায় চারার অবস্থাসমূহ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বীজতলায় সহজে পানি দেওয়া এবং সহজে নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হয়। রৌদ্রের তেজ এবং বৃষ্টি ও ঝড়ের ঝাপটা হতে রক্ষা করার বিশেষ ব্যবস্থাও সবজি চাষের প্রথম ধাপ হিসেবে বীজতলায় রাখতে হয়। তাহলে চারার প্রাথমিক দুর্বল অবস্থায়ও চারা দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে।

সবজি চাষে বেড তৈরি- বেডে সবজি চাষ করতে সহজ হয়। অধিকাংশ সবজিই চারা তৈরি করে চাষ করা হয়। এছাড়াও অনেক সবজির বীজ লাইনে বপন/রোপণ করা হয় এবং এতে বীজ কম লাগে, পরিচর্যা সহজ হয়, রোগ পোকামাকড় দমন সহজ হয়, সেচ নিকাশ সুবিধাজনক হয়, ফলন বাড়ে। তাই সবজি চাষে বেড তৈরি করার গুরুত্ব আছে। জমি চাষ করে পরিপাটিভাবে তৈরির পর ফসলের দূরত্বের সাথে সংগতি রেখে চওড়া করে বেডের মাপ দিতে হয়। প্রতিটি বেডের পর ১৫-২০ সে.মি. চওড়া অগভীর নালা কেটে সরু লম্বা ফালিতে বিভক্ত করা হয়। লম্বা ফালির মাটি দুপাশ দিয়ে একটু উঁচু আকারে বেড তৈরি করা হয়। এরপর বেডে মাদা করে বা খুবরী (গর্ত) করে বা লাইন টেনে বীজ/চারা রোপণ করা হয়। নালাগুলো পানি সেচ বা নিকাশ ও কাজের জন্য চলাচলে ব্যবহার করা হয়। বেডগুলো অনেক সময় বীজ/চারা এক বা দুই বা তিন সারিতে রোপণ করা হবে কী না তার ওপর নির্ভর করে চওড়া করা হয়। প্রতি দুই বেডের মাঝখানে ১৫-২০ সে.মি. চওড়া ও ৭-৮ সে.মি. গভীর করে নালা তৈরি করা হয়।

এই নালা তৈরির সময় যে মাটি উঠানো হয় তা বেড়ে দিয়ে বেডকে কিছুটা উঁচু করা হয় যাতে সেচ বা বৃষ্টির পানি সাথে সাথে গড়ায়ে নালায় যেতে পারে। কেননা অধিকাংশ সবজিই দাড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। কিছু কিছু সবজি আছে যেগুলো বেডের পরিবর্তে আইল তৈরি করে তাতে রোপণ করা হয়। যেমন- বরবটি, শসা, টমেটো। জমি উত্তমরুপে তৈরি করে ফসলের দূরত্ব বিবেচনা করে উঁচু উঁচু আইল তৈরি করা হয়। এ আইলে সবজি রোপণ করে ইংরেজি 'এ' অক্ষরের ন্যায় বাউনি তৈরি করে তাতে গাছ উঠায়ে দেওয়া যায়।। যে সব সবজির বীজ সরাসরি ছিটিয়ে বোনা হয় এসব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ জমিকে লাঙ্গল দিয়ে ফালি টেনে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। সাধারণত বীজ ছিটিয়ে বোনার পর জমিতে ফালি টানা হয়। এই ফালিগুলোই পরিচর্যার জন্য চলাচল, সেচ ও নিকাশের কাজে ব্যবহৃত হয়। মূলা, লালশাক, সর্ষে শাক, মটর শাকজাতীয় সবজির বীজ বপণের পর জমিতে ফালি টানা হয়।

নালা তৈরিঃ সবজি চাষে অঙ্কুরোদগমকৃত এবং রোপণকৃত বীজ বা চারার জন্য পানির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। সবজির ধরন, চাষের সময়, জমির ধরন ও ফসলের বৈশিষ্ট্যের ওপর পানির প্রয়োজন কতটুকু তা নির্ভর করে। এই পানি বিভিন্নভাবে সরবরাহ করা হয়। জমির শোষণ ক্ষমতা ও ফসলের চাহিদার অতিরিক্ত পানি যদি জমিতে দাঁড়ানো থাকে তাহলে ফসলের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি জমি দীর্ঘসময় ভেজা থাকলে ফসলের চাহিদাকৃত পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা যায়। আবার জমি বেশি শুকনা থাকলে বা রসের ঘাটতি থাকলে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই এ উভয় অবস্থা থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য সেচ বা নিকাশের জন্য নালার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। জমির চারদিক দিয়ে বা ভিতরে নালা করতে হলে জমির এ নালার সাথে অন্যান্য মাঝারি বা বড় নালার সাথে সংযাগে থাকতে হবে। তাহলে জমি থেকে অতিরিক্ত পানি দ্রুত সরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সবজি চাষে সারের ব্যবহার 

সবজি চাষে সারের চাহিদা নিরূপণ

চাষের পূর্বে সবজির সারের চাহিদা নিরূপণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সবজির চাহিদা মোতাবেক সঠিক পরিমাণ অপেক্ষা কম সার ব্যবহার করলে ফলন কমে যাবে। অন্যদিকে বেশি সার ব্যবহারে সারের অপচয় হবে, খরচ বেড়ে যাবে, ফসলের গুণাবলি ও জমির উর্বরতা নষ্ট হবে। সবজির সারের চাহিদা সঠিকভাবে জানতে হলে চাষাবাদের পূর্বে মাটিতে কতটুকু খাদ্যোপাদান আছে পরীক্ষা করা উচিত। মাটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকলে তা প্রয়োগের মাধ্যমে পূরণ করে দিতে হবে। ফসল সংগ্রহের পর আবার পরীক্ষা করে জানা যাবে যে উক্ত ফসল জমি হতে কতটুকু বিভিন্ন খাদ্যোপাদান শোষণ করেছে। শোষণকৃত পরিমাণই হলো উক্ত ফসলের সারের চাহিদা। তবে, সারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে কতগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন-

(১) ফসলের খাদ্যোপাদান চাহিদা ও পরিশোষণ ক্ষমতা 

(২) ভূমির উর্বরতা। 

(৩) মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক অবস্থা 

(৪) আবাদ পদ্ধতি ও মৌসুম 

(৫) সারের গুণাবলি এবং

(৬) সার ও ফসলের মূল্যের অনুপাত। 

মাটিতে কোন একটি খাদ্যোপাদান ঘাটতি থাকলে এবং অন্যান্য খাদ্যোপাদানের পরিমাণ বেশি থাকলেও গাছ সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। তাই ফসলের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে কৃত্রিম উপায়ে সার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। কোন ফসলের প্রয়োজনীয় সব খাদ্যোপাদান উপযুক্ত মাত্রাকে একত্রে সুষম মাত্রা বলে।

যেখানে মাটি পরীক্ষার সুযোগ নেই সেখানে সবজির সারের চাহিদা নিরূপণ করতে হয় এর আহারাপেযাগী অংশ বিবেচনা করে। যেমন, পাতাজাতীয় সবজি প্রধানত নাইট্রোজেন, ফুল ও ফল জাতীয় সবজি ফসফরাস এবং মূলজাতীয় সবজি পটাশ সার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে থাকে। তাই আহারপযাগেী অংশের কথা খেয়াল রেখে সবজির সারের চাহিদা ঠিক করতে হবে। এছাড়া সবজি চাষের মেয়াদ বিবেচনা করেও সারের চাহিদা ঠিক করা যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদি সবজির বেলায় বেশি মেয়াদি সবজির চেয়ে কম পরিমাণ সারের প্রয়োজন হবে।

সারের চাহিদা পূরণের জন্য রাসায়নিক সারের ওপর পুরোপণরি নির্ভর না করে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। সবজির প্রধান খাদ্যোপাদানগুলোর মোট চাহিদার অনতুত ১০-১৫ ভাগ জৈব সার হতে আসা উচিত। বিভিন্ন সবজির খাদ্যোপাদান চাহিদা নিচের সারণিতে দেওয়া হলো ।

সারণিঃ বিভিন্ন সবজির খাদ্যোপাদান পরিশাষেণের পরিমাণ (জাপানী মি. ইয়ামা জাকীর ফলাফল (১৯৫৮)

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সবজি চাষে সার প্রয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সারের প্রয়োগ পদ্ধতি নিম্নোক্ত কারণে বিভিন্ন রকম হতে পারে। যথা- ১) মাটির ভৌত ও রাসায়নিক অবস্থা, ২) আবহাওয়া, ৩) সারের প্রকার ও গুণাবলি, ৫) ফসলের প্রকার (পাতা, দানা বা ফুলজাতীয় ইত্যাদি), ৬) শিকড়ের প্রকৃতি ও খাদ্যোপাদান গ্রহণ ক্ষমতা, ৭) ফসলের সময়কাল, ৮) সারের ধরন ইত্যাদি। সারের প্রয়োগ পদ্ধতির ওপর সারের কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। সুষ্ঠুভাবে উপযুক্ত পরিবেশে শিকড়ের নাগালের মধ্যে সার প্রয়োগ করা হলে ফসল পুরোপুরি তা গ্রহণ করতে পারে। তাছাড়া সার মাটিতে আবদ্ধ হয়ে, পানিতে ধুয়ে বা বাতাসে উড়ে বিনষ্ট হতে পারে। সার প্রয়োগের পদ্ধতি ও সময়কে বিবেচনা করে সার প্রয়োগ কার্যক্রমকে চারভাগে ভাগ করা হলো। যথা-

(ক) মৌল (খ) উপরি (গ) পাতায় ও (ঘ) বিশেষ প্রয়োগ ।

ক) মৌল প্রয়োগঃ জমিতে বীজ বপন বা চারা রোপণের পূর্বে সার প্রয়োগ করাকে মৌল প্রয়াগ বলা হয়। যে সব সার ধীরে ধীরে দ্রবণীয় বা গাছের গ্রহণ উপযোগী হয় এবং সহজে বিনষ্ট হয় না সেগুলো, এবং সহজে বিনষ্ট হয় না সেগুলোকে মৌল হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। বিভিন্ন জৈব সার, চুন, ফসফরাস, জিপসাম ইত্যাদি প্রায় পুরোপুরি মৌল হিসেবে প্রয়োগ করা হয় আবার পটাশ, জিংক, নাইট্রোজেন ইত্যাদি মাটির ও ফসলের প্রকারভেদে ২৫-৫০ ভাগ মৌল প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে দ্রবণীয় সার আগাম প্রয়োগ করা হলে ফসলের প্রয়োজনের সময়ে পরিশোষণে উপযোগী হয় । এছাড়া সারের রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাবে বীজ বা চারার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মৌল প্রয়োগের উদ্দেশ্যে হলো পরিচালন ক্ষমতাহীন সার ফসলের শেকড়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়া।

(১) ছিটিয়ে প্রয়োগ- এ ক্ষেত্রে জমি চাষের পর সমস্ত জমিতে সার ছিটিয়ে মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি খুবই সহজ, কম শ্রম ও স্বল্প ব্যয় সাপেক্ষ এবং সময়ও কম লাগে। গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধিকালীন সময়ে উপরি প্রয়োগ বা পার্শ্ব প্রয়োগের মাধ্যমেও সার ছিটিয়ে দেয়া হয়।

সার ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ করা হলে সাধারণত মাটিতে আবদ্ধ হয়ে যায় ফলে গাছ গ্রহণ করতে পারে না। ছিটিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে সার গাছের নাগালের বাইরে চলে যায় এতে অপচয় হবার সম্ভবনা বেশি থাকে। ঝড়ো বাতাসের সময় বিশেষ করে গুড়ো সার প্রয়োগ করা অসুবিধাজনক এবং অপচয় হয়। অনুর্বর, সেচবিহীন এবং পাতলা চারা সম্পন্ন ফসলের জমিতে এ পদ্ধতি একেবারেই উপযোগী নয়। ফসলের অঙ্গজ বৃদ্ধির সময় সার ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ করা হলে গাছের পাতা পুড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

স্বল্পমেয়াদি ও ঘন করে ছিটিয়ে বানো শাক-সবজির জমিতে দ্রুত দ্রবণীয় ও পরিচালনশীল সার ছিটিয়ে মৌল হিসেবে প্রয়োগ করা যায়।

(২) স্থানীয় প্রয়োগ- অনুর্বর জমিতে এই পদ্ধতি  উপযোগী  এবং কম সার ব্যবহার করে বেশি ফলন পাওয়া যায়। বীজের কাছাকাছি সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে পাশে ও গভীরতায় যথাক্রমে ৮ সেমি দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। আর গাছের বেলায় শিকড়ে বিস্তৃতি লক্ষ করে সারা প্রয়োগ করা উচিত। মৌল সারের অর্ধেক ছিটিয়ে এবং বাকী অর্ধেক সারি বা শেকলের কাছে প্রয়োগ করা উত্তম। নিচে সার প্রয়োগের কয়েকটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।

(১) চারার গর্তে প্রয়োগ- সবজির চারা রোপণের পূর্বে নির্দিষ্ট স্থানে পর্ব করে মাটির সাথে মৌল সারের অর্ধেক মিশিয়ে দেওয়া হয়। যথা- ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোশী, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি।

(২) মাদায় প্রয়োগ- ফল জাতীয় সবজির বীজ বা চারা রোপণের জমিতে নির্দিষ্ট স্থানে মাদা বা খালা তৈরি করে লাগানো হয়। চারা লাগানোর পূর্বে মাদায় মৌল সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যথা- কুমড়া জাতীয়, লাউ, শসা, চিচিঙ্গা, পেঁপে, কলা ইত্যাদি ।

(৩) লাঙ্গল স্তরে প্রয়োগ- জমি তৈরি শেষে লাঙ্গলের সাহায্যে অগভীর জুলি বা নালা তৈরি করে তাতে মৌল সার প্রয়োগ করা হয়। পরে মই দিয়ে জমি সমান করে দিয়ে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা হয়। বীজ বা চারার শেকড় বাড়ার পর প্রয়োগকৃত সার শেকড়ের সাহায্যে পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে ।

(৪) বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োগ- এ পদ্ধতিতে বীজ ও সার একত্রে বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োগ করা হয়। এ প্রথার বীজের ক্ষতিকর সম্ভাবনা থাকে। তাই একত্রে বীজ ও সার ছিল বা বপন না করাই ভালো।

(গ) উপরি প্রয়োগ- জমিতে বীজ বপন বা চারা রোপণের পরে সার প্রয়োগ করা হলে তাকে উপরি প্ররোগ বলে। সাধারণত নাইট্রোজেন, পটাশ, ছাই, দা, তরুণ গোবর ইত্যাদি সার জমিতে উপরি প্রয়োগ করা হয়। গাছের পাতায়, কাখে বা মূলে সরাসরি লেগে গেলে ফসলের ক্ষতি হয়। তবে শস্যের অবস্থা বুঝে সার প্রয়োগ করা হলে সারের অপচয় কম হবে। বড় বৃষ্টিতে ফসল ক্ষতিত হলে উপরি প্রয়োগ করে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হয়।

সবজি চাষে এ পদ্ধতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উপরি প্রয়োগের কয়েকটি পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।

১। ছিটিয়ে উপরি প্রয়োগ- ছিটিয়ে বালো সবজির জন্য নাইট্রোজেন ও পটাশ জাতীয় সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করা বেশ সহজ। মাটিতে রসের অভাব থাকলে উপরি প্ররোগ সারের সুফল কম পাওয়া যায়। মূলা, ভাটা, লালশাক, পালংশাক ইত্যাদি সবজিতে উপরি প্রয়োগ হিসেবে সার ছিটিয়ে দেয়া হয়।

২। পার্শ্বপ্রয়োগ- সারি পদ্ধতিতে আবাদ করা সবজির পার্শে লাইন টেনে তাতে সার প্রয়োগ করা যায়। যথা ফুলকুপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মরিচ, গোলআলু, টমেটো, শশা, মুখীকচু কোন কোন ক্ষেত্রে মূলা, পালংশাক ইত্যাদিতে সার প্রয়োগের পর ফসলের চাহিদানুযারী গোড়ার মাটি তুলে সার ঢেকে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি সবজি চাষের জন্য উপযোগী। ফসলের সারির দুদিকে একবারে সার না দিয়ে পর্যায়ক্রমে দু'দিকে দারে সার দেয়া উত্তম। একে ব্যান্ড প্রয়োগ পদ্ধতিও বলা হয়।

৩। চারপাশে প্রয়োগ- মাদায় লাগানো গাছের চারপাশে শেকড় থেকে নিরাপদ দূরত্বে রিং করে নালা কাটা হয় । । এক্ষেত্রে নালায় সার প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। যথা- লাউ, শিম, কুমড়াজাতীয় শসা, কলা, পেঁপে ইত্যাদি।

৪। কালার গোলকে প্রয়োগ- এ পদ্ধতিতে কাদামাটি দিয়ে গোলক তৈরি করা হয়। মাটির গোলকের কেন্দ্রে সামান্য পরিমাণ ফাঁকা করে নাইট্রোজেন সার দিয়ে গোলকটি আঁটকেয়ে ভালোভাবে শুকানো হয়। সাধারণত ১ : ১০ অনুপাত নাইট্রোজেন সার ও কাদামাটি দিয়ে গোলক তৈরি করা উত্তম। এ পদ্ধতিতে প্রয়োগকৃত সার অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে দেড়গুণ বেশি পরিমাপে গাছের গ্রহণ উপযোগী হয়। সবজি চাষে এ পদ্ধতির প্রচলন এখনো তেমন হয়নি।

৫। বড়ি প্রয়োগ- এ পদ্ধতিতে সারের সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে আবরণ তৈরি করা হয়। এ ধরনের সার হতে উপাদান ধীরে ধীরে দ্রবণশীল হয়। ফলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত গাছ খাদ্যোপাদান সরবরাহ পেয়ে থাকে এবং এতে অপচয় কম হয়। যেমন- ইউরিয়া ফরম, সালফার কোটেড ইউরিয়া, মিশ্র সার উল্লেখযোগ্য। এ সারের দাম কিছুটা বেশি হলেও কার্যকরিতা অনেক বেশি। সবজি চাষে এ পদ্ধতি প্রচলন এখনো তেমন হয়নি।

৬। প্রবিষ্টকরণ- এ পদ্ধতিতে তরল বা দানা জাতীয় সার সিরিঞ্জের মত যন্ত্রে চাপ প্রয়োগের দ্বারা মাটির অত্যন্তরে দেয়া হয়। এতে মাটির বিভিন্ন স্তরে এবং গাছের শেকড়ের কাছাকাছি সার প্রয়োগ করা সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে সারের অপচয় একেবারেই হয় না। তবে এ পদ্ধতি এখনো তেমন প্রচলিত হয় নাই। অনেক উন্নত দেশে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- জাপান, তাইওয়ান ।

(গ) পাতায় প্রয়োগ

বিশেষ ক্ষেত্রে সারের দ্রবণ তৈরি করে সিঞ্চনের মাধ্যমে গাছের পাতায় প্রয়োগ করা হয়। এতে নির্দিষ্ট অনুপাতে দ্রবীভূত সার সিঞ্চন যন্ত্রে বা হেলিকপ্টারের সাহায্যে গাছের পাতায় প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। দ্রবণকৃত সার সব সময় পাতার কোষের রসের ঘনত্বের চেয়ে কম হওয়া দরকার। অন্যথা পাতা পুড়ে যাবে। এ পদ্ধতিতে যে কোন মূখ্য উপাদানের অর্ধেক ও গৌণ উপাদানের প্রায় সবটুকু সার পাতায় প্রয়োগ করা চলে। নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও জাতীয় সার অধিক পরিমাণে লাগে বিধায় শুধু পাতায় প্রয়োগ করে গাছের চাহিদা মেটানো খুব দুরহ। তবে গৌণ উপাদানের প্রকৃতি অনুপাতে দ্রবণ তৈরি করে পাতায় স্প্রে করে গাছের চাহিদা পূরণ করা যায়। সারের দ্রবণ তৈরির নিয়ম নিচে দেয়া হলো ।

সারণি ও বিভিন্ন সারের দ্রবণ তৈরির বিবরণ

উপাদান

কী আকারে পাওয়া যায়

প্রতি লিটার পানিতে মিশানোর পরিমাণ (গ্রাম)

১) লৌহফেরাস সালফেট২.৫৩.৫
২) ম্যাংগানিজম্যাংগানিজ সালফেট২.৫৫.০
৩) জিংকজিংক সালফেট২.৫৫.০
৪) কপারকপার সালফেট২.৫৫.০
৫) বোরন সোডিয়াম বোরেট২.৫৬.০
৬) মলিবডিনাম

এমোনিয়াম মলিবডেট 

সোডিয়াম মলিবডেট

০.৩

০.৬

০.৮

০.৬

এছাড়া ১-১.৫ ভাগ ইউরিয়া সারের দ্রবণ তৈরি করে সবজি ও অন্যান্য ফসলের পাতায় বিকালে প্রয়োগ করা যায় । পাতাজাতীয় সবজিতে পাতায় প্রয়োগে সবজি তাড়াতাড়ি সবুজ ও সতেজ হয়। বয়স্ক পাতা ও পাতার বাইরের পিঠের পরিশাষেণ ক্ষমতা বেশি। চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলেই প্রথমে পাতায় সার সিঞ্চন করা যায়। বর্ষজীবী ফসলে তার জীবনকালে ৩-৪ বার সিঞ্চন করা চলে ।

চিত্রঃ সিঞ্চন পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ

গোবর, খৈল ইত্যাদি জৈব সার ভালোভাবে পচারে তরলাকারে পাতায় প্রয়োগ করা যায়। এ পদ্ধতিতে অপচয় কম হয় ও গাছে দ্রুত খাদ্যোপাদান পরিশোধিত হয়। ফসলের জমিতে পানি পরিপূর্ণ থাকলে এবং মাটিতে কোনরুপ প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এ পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করা যায়। তবে মূখ্য খাদ্যোপাদানের চাহিদা সম্পূর্ণ পুরণ করা যায় না। বেশি বাতাসের সময় সার প্রয়োগে অসুবিধা হয়। সার প্রয়োগের পর পরই বৃষ্টি হলে সার ধুয়ে যায়। তাই মেঘলা আবহাওয়ার বা বৃষ্টির পূর্বে সার দেওয়া উচিত নয়। যে সব ফসলের পাতা মোমযুক্ত সেক্ষেত্রে পাতায় সার প্রয়োগে কোন সুফল পাওয়া যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে ফসলে দ্রবণের সাথে আঁঠালো পদার্থ (টুইন -২০) মিশিয়ে দেখ করা উত্তম।

(ঘ) বিশেষ প্রয়োগ

(১) সেচের পানির সাথে এ পদ্ধতিতে সেচের পানির সাথে সার মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে সমতল জমিতে, সমস্ত জমিতে সমভাবে ও সম উচ্চতার পানি পৌঁছালে সবগাছ সমানভাবে সার পরিশোষণ করতে পারে।

(২) বুস্টার বা স্টার্টার দ্রবণ প্রয়োগ- চারার চাহিদা পূরণ ও বৃদ্ধি দ্রুত করার জন্য মূখ্য উপাদানসমূহের দ্রবণ চারার গোড়ায় সিঞ্চন করা হয়। মূখ্য উপাদান ৩টি যথা- নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ। এগুলোকে একত্রে বা পৃথকভাবে পানিতে গুলিয়ে ১৪৫৪২ অনুপাতে চারার গোড়ায় সিঞ্চন করাকে স্টার্টার প্রয়োগ বলে। সাধারণত এন.পি.কে ১৪৫৪২ অনুপাতের দ্রবণ তৈরির জন্য ডাই এমোনিয়াম ফসফেট ও মনাপটাশিয়াম মিশ্রণ সমানুপাতিক- ভাবে গুলিয়ে নিতে হয়। প্রতি গ্যালন পানিতে এক আউন্স বা প্রতি লিটার পানিতে ৬ গ্রাম দ্রবীভূত করলে এই দ্রবণ (এনপিকে) তৈরি হয়।

(৩) বায়বীয় আকারে প্রয়োগ- বায়ুতে সাধারণত ০.০৩ ভাগ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিদ্যমান থাকে। কৃত্রিমভাবে বাতাসে এর পরিমাণ বাড়ানো গেলে গাছের সালোক সংশ্লেষণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে ফসলের ফলন ও গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে এবং গাছের জীবনকাল কমে যাবে। তাই ফলন বাড়ানোর জন্য অনেক দেশে গ্রীণ হাউজে ও খোলা মাঠেও কার্বন ডাই অক্সাইড বা এমোনিয়াম প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

সার প্রয়োগের সময়- ফসলের দৈহিক বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্যোপাদানের চাহিদা বিভিন্ন রকম হয়। চারা অবস্থায় খাদ্যোপাদান চাহিদা কম থাকে এবং চারার বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে চাহিদা বাড়তে থাকে। দৈহিক বৃদ্ধি, শাখা প্রশাখা, মূল ইত্যাদি অপেক্ষা ফুল ও ফল ধারণকালে চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয়। আবার চারা অবস্থার শেষ সময়ে চাহিদা কমে যায়। সার ভালোভাবে কাজে লাগার জন্য নিচের বিষয়গুলো বিশেষভাবে দায়ী। যথা-

১। গাছের বিভিন্ন খাদ্যোপাদান মাটিতে ধরে রাখার ক্ষমতা 

২। সারের মাত্র

৩। মাটিতে তাপমাত্রা ও সারের প্রয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদি।  

৪। সারের গুণাবলি

৫। সারের দ্রবীভূত ক্ষমতা  

৬। মাটিতে রসের পরিমাণ

সার ব্যবহারের কয়েকটি সাধারণ নিয়মাবলি নিচে দেয়া হলো ।

(১) সব ধরনের জৈব সার (গোবর সার, আবর্জনা পঁচা সার, সবুজ সার), ফসফরাস পুরোপুরি এবং পটাশ সারের অর্ধেক মাত্রা জমি তৈরির শেষ চাষের সময় দিতে হয়। সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয় । 

(২) সেচ বিহীন ও শুকনো জমিতে সব ধরনের জৈব ও অজৈব সার পূর্ণমাত্রায় বীজ বপনের পূর্বে প্রয়োগ করতে হয়। 

(৩) মাদায় রোপণযোগ্য (লাউ, কুমড়াজাতীয়, শিম, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি) সবজির জন্য ফসফরাস ও জৈব সার পুরাপুরি বীজ বপন বা চারা রোপণের পূর্বে মাদায় মৌল হিসেবে প্রয়োগ করতে হয়। পটাশ ও নাইট্রোজেনযুক্ত সার পরবর্তীতে বারে বারে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। 

(৪) বহুবর্ষজীবী ফসলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ও বর্ষার শেষ দিকে মোট ২ বারে সার প্রয়োগ করতে হয়। 

(৫) স্বল্পমেয়াদি শাক সবজিতে নাইট্রোজেন ব্যতিত প্রায় সব সারই মৌল হিসেবে এবং নাইট্রোজেন সার কয়েক কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হয়।

বিভিন্ন শাক সবজি যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মূলা, বেগুন, মরিচ, টমেটো, গাজর ইত্যাদি বৃদ্ধির কোন পর্যায়ে কী পরিমাণ খাদ্যোপাদান প্রয়োজন তা সারণিতে পূর্বে দেওয়া হয়েছে। এ ভিত্তিতে ২-৩ বারে সারের উপরি প্রয়োগ করলে বেশি সুফল পাওয়া যায় এবং অপচয় কম হয়।

সার প্রয়োগের সাবধানতা

সার প্রয়োগের জন্য নিচের সাবধানতাগুলো মেনে চলা উচিত। যেমন-

(১) ঝড়ো বাতাসের সময়ে বা ফসলের পাতা ভেজা অবস্থায় সার উপরি প্রয়োগ করা উচিত নয়। এতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে। 

(২) কাঁচা গোবর, খৈল, চুন, হাড়ের গুড়ো ইত্যাদি দন্ডায়মান ফসলে প্রয়োগ করা উচিত নয়। ফচা সার জমিতে প্রয়োগ করা হলে তার প্রায় একমাস পরে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা উচিত। 

(৩) জমিতে শুধু রাসায়নিক সার ব্যবহার করে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না। তাই রাসায়নিক সার ও জৈব সার সুষম মাত্রার প্ররোপের মাধ্যমে জমির উর্বরতা বজায় রাখা যাবে। 

(8) সমস্ত জমিতে সমভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। (৫) জমির অম্লতা বা ক্ষারত্বের সাথে মিল রেখে সার প্রয়োগ করা উচিত। 

(৬) বিভিন্ন ধরনের সার একরে মেশানোর পূর্বে সেগুলোর রাসায়নিক বিক্রিয়া জেনে তারপর মিশাতে হবে। কেননা কোন কোন সার মিশালে বিক্রিয়া ঘটে। 

(৭) বৃষ্টির ঠিক পূর্ব মুহুর্তে বা জমিতে প্লাবন পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া হলে সে সময় সার প্রয়োগ করা উচিত নয় । 

(৮) প্রখর রোদের সমর বিশেষ করে নাইট্রোজেনযুক্ত সার ছিটালে বেশির ভাগই বাতাসে উড়ে নষ্ট হতে পারে।

সবজি চাষে পানি সেচ ও নিষ্কাশন 

পানির অপর নাম জীবন। এ কথাটি প্রাণি ও উদ্ভিদ জগতের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। পানি মাটির খাদ্যোপাদানসমূহকে দ্রবীভূত করে গাছের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করে থাকে। গাছের অঙ্গার আত্মীকরন শস্যের সজীবতা রক্ষা, প্রয়োজনীয় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সরবরাহ প্রভৃতি কাজে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটিতে পর্যাপ্ত রসের অভাবে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আবার জলাবদ্ধতা ঘটলে উদ্ভিদের শ্বাস প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং যথেষ্ট ক্ষতি হয়। সুতরাং সবজি চাষে সাফল্য লাভের জন্য পানি সেচ ও নিকাশের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত অত্যাধিক হলেও বারো মাসে সমানভাবে হয় না। বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত অতিবৃষ্টি আর কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত অনাবৃষ্টির কারণে সবজির চাষে অসুবিধা হয়। তাই সেচ ও নিকাশ সুবিধাযুক্ত জমি সবজি চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত । পানি সেচ ও নিকাশ সুবিধার জন্য জমি কয়েকটি সুবিধাজনক খণ্ডে বিভক্ত করে নিতে হয়। এরপর সবজির ধরন, মৌসুম ও আবাদ পদ্ধতির ওপর লক্ষ রেখে জমিতে প্রয়োজনীয় আইল ও নালা তৈরি করতে হয়। তাতে পানি নিয়ন্ত্রণ কর সহজ হয়।

বিভিন্ন সবজির পানির চাহিদা

সব ধরনের সবজির পানির চাহিদা এক রকম নয়। তাছাড়া একই সবজির জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তরে পানির চাহিদাও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। নিচের সারণিতে সবজির জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তর ও পানির চাহিদার তারতম্য দেখানো হলো । 

সারণি ও সাধারণভাবে সবজির জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তরে পানির চাহিদা

এই তথ্যের ভিত্তিতে সবজি চাষে জমিতে সেচ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। পাতাজাতীয় সবজি (লেটুস, পালং শাক, পুঁই শাক) ও কপি গোত্রের সবজির পানির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এগুলোর শিকড় মাটির বেশি গভীরে প্রবেশ করে না বিধায় বেশি পরিমাণে ও ঘন ঘন সেচ দিতে হয়। পেঁয়াজ, মরিচ, বেগুন, শসা এবং টমেটোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পানির প্রয়োজন। গোল আলু, মূলা প্রভৃতির জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন থাকলেও নিয়ন্ত্রিতভাবে সেচ দেওয়া আবশ্যক। সেচের দ্বারা বা বৃষ্টির কারণে পানিবদ্ধতা ঘটলে শিকড় ও ফসল পঁচে বিনষ্ট হতে পারে। অপরদিকে শিমজাতীয়, কুমড়া ও অন্যান্য বহুবর্ষজীবি সবজি পরিমিত ও নিয়ন্ত্রিত সেচে ভালো ফলন দেয়।

সবজি চাষে সেচের মাধ্যমে কী পানি দিতে হবে তাও জানা দরকার। কেননা সেচের পানির সাথে ফসলের ক্ষতিকর রোগ জীবাণু বা উপাদান যেতে পারে। বীজতলায় বীজ গজানোর বা সবজি রোপণের পর পরই যে সেচ দেওয়া হয় তা লবণমুক্ত হতে হবে। পুকুর, নদী বা খালের পানিতে নানা ধরণের আগাছা ও কলকারখানার বর্জ্য মিশে সেচের অনুপোযোগী হতে পারে। তাই সেচের পানিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত । 

(১) পুকুর, নদী বা খালের পানি সেচ দেওয়ার সময় হেঁকে নিতে পারলে ভালো । 

(২) পানির উৎসের পাশে ট্যাঙ্ক স্থাপন করে বালি দ্বারা ফিল্টার করে পানি সংরক্ষণ করে তা সেচে ব্যবহার করা।

(৩) সবজির চারা অবস্থায় ০.৫ মিলিগ্রাম ক্লোরিন প্রতি এক লিটার পানিতে মিশায়ে সেচ দেয়া যায়। তাতে অনেক রোগের জীবাণু মারা যায় ও শেওলা দমন হয় । 

(৪) গভীর বা অগভীর নলকূপের পানি কোন পুকুর বা ট্যাংকে জমা রেখে তারপর সেচ দেয়া ভালো। বর্তমান- কালে খাল, নালা, ডাবো ইত্যাদি জলাশয়ের পানি যেখানেও দূষিত হচ্ছে সেখানে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

সেচের সঠিক সময় নির্ণয়

সেচ দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মাটিকে সরস রাখা, যাতে ফসলের ভালো ফলন নিশ্চিত হয়। শাক সবজির (পানি কচু ব্যতীত) বেলায় জমির সরস অবস্থার একটু নিচেই পানির মাত্রা গিয়ে যখন পৌঁছে তখনই সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ অবস্থা কখন হবে তা খালি চোখে দেখে বুঝা যায় না। এজন্যে মাটির রস মেপে দেখতে হয়। হাতের সাহায্যে মাটির রস মাপার সহজ পদ্ধতি নিচে ছবিতে দেখানো হলো। সবজি চাষে সেচ সময় নির্ধারণের সাধারণ বিবেচ্য বিষয়গুলো। যথা-

(১) চারা গজানোর পর থেকে ফুল ধরা পর্যন্ত সবজির পানির চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। তারপর এ চাহিদা আবার কমতে থাকে । তাই গাছের বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কখন এবং কতবার সেচ দিতে হবে তা ঠিক করে নিতে হয়। সাধারণত বৃষ্টি না হলে সবজির ফুল আসা অবধি প্রতি ১০ দিন অন্তর অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। 

(২) বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা খুব কম। এ জাতীয় মাটিতে ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। 

(৩) জমিতে পানির অভাব হলে মাটির রং হালকা ধরনের হয়। তাই মাটি হালকা রং ধারণ করলে সেচ দেয়া উচিত। 

(৪) পানির অভাব দেখা দিলে গাছের পাতা নেতিয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখা দেয়া মাত্র পানি সেচ দেয়া উচিত। 

(৫) স্বল্প গভীর শিকড় বিশিষ্ট সবজির জমিতে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতার শতকরা ৭০ ভাগের কম হলেই সেচ দেয়া উচিত । 

(৬) নিচের সূত্র দ্বারা মাটিতে পানির পরিমাণ জেনে নিয়ে সবজির জমিতে সেচ দেয়া যেতে পারে। জমি হতে নেয়া ১ কেজি মাটির ওজন - চুলোতে শুকানোর পর ঐ মাটির ওজন। মাটিতে পানির পরিমাণ (%)

ধরা যাকঃ চুলাতে শুকানো মাটির ওজন ৬০০ গ্রাম। তাহলে পানি ছিল ১০০০-৬০০ গ্রাম = ৪০০ গ্রাম

এখন রসের %  =  -  ×  =  ×   =  .%

হাতের সাহায্যে মাটির রস মাপার কৌশল

এ পদ্ধতি খুব কার্যকরি এবং এভাবে জমিতে রসের অবস্থা দেখে সেচ দেয়া যেতে পারে। নিচের পদ্ধতি অনুসারে মাটিতে পানির ধারণ ক্ষমতা নির্ণয় করা এবং সারণির বর্ণনা মোতাবেক মাটিতে সেচ দেয়া উচিত।

ধাপ - ১

জমির মাঝখানে একটি ছোট গর্ত করতে হবে। গর্তটির মাপ হবে জমিতে যে ফল আছে সে ফসলের শেকড়ের গভীরতার ৩ ভাগের ২ ভাগ।

 

ধাপ ২

গর্ভের তলা থেকে মাটি নিয়ে হাতের মুঠোর চাপ দিয়ে গোলাকার করে দলা বা বল তৈরি করতে হবে। শেকড় অঞ্চলের গভীরতার ৩ ভাগের ২ ভাগ গভীরতার মাটি।

ধাপ ৩

সারণির বর্ণনার সাথে এ মাটির দলার বা বলের মিল করে জমির মাটিতে গাছের উপযোগী কতটুকু রস আছে তা বোঝা যাবে।

Content added By

অনুশীলনী

এক কথায় উত্তর 

১. বেলে মাটিতে শতকরা কতভাগ বালিকণা থাকে? 

২. কোন মাটিতে ৩৫ ভাগ কর্দমকণা ও একই পরিমাণ পলিকণী থাকে ? 

৩. মাটিতে পিএইচ মানাঙ্ক কত ভাগের নিচে থাকলে অম্লীয় মাটি বলে ? 

৪. প্রশম মাটিতে পিএইচ মানাঙ্ক কত? 

৫. কী প্রয়োগ করে অম্লীয় মান বাড়ানো যায়, অর্থাৎ পিএইচ মানাঙ্ক বেশি হয় ? 

৬. ২০০৭-০৮ সনে মোট আবাদি জমির কত % জমিতে শাক সবজি চাষ হয় ? 

৭. চাষবিহীন জমি হতে কত % পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায় ? 

৮. পুষ্টি সরবরাহে সারের চাহিদার কত % জৈব উৎস হতে আসা উচিত?

৯. সার প্রয়োগের পদ্ধতি বিবেচনা করে কয়ভাগে ভাগ করা যায় ? 

১০. কাদায় গোলকের মাধ্যমে সার প্রয়োগে নাইট্রোজেনযুক্ত সার ও মাটির অনুপাত কত ? 

১১. স্টার্টার দ্রবণ তৈরিতে ১:৫:২ অনুপাতে কী কী নেওয়া হয় ? 

১২. ফুলকপি চাষে মাটিতে সর্বনিম্ন কত % রস হলে অবশ্যই সেচ দিতে হয় ? 

১৩. মালচিং কত প্রকারের হয় ? 

১৪. কোন পোকা সবজির ভাইরাস ছড়ায় ?

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

১. গার্হস্থ্য সবজি বাগান সম্পর্কে লেখ। 

২. অম্ল মাটি বলতে কী বোঝায় ? 

৩. মাটির পিএইচ মানাঙ্ক কীভাবে সংশোধন করা যায় ? 

৪. জমিতে সারের পরিমাণ নির্ধারণে কোন কোন বিষয় বিবেচনা করতে হয় ? 

৫. পাতায় প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন সারে দ্রবণ তৈরি করা সম্পর্কে লেখ। 

৬. যে সব বিষয়গুলো সারের কার্যকারিতা বাড়ায় তা লেখ। 

৭. জমিতে সেচ ও নিকাশ বলতে কী বোঝায় ?

রচনামুলক প্রশ্ন 

১. সবজি চাষের জন্য মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর । 

২. সবজি চাষের জন্য জমি তৈরির সুবিধাদি ও প্রস্তুত পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

৩. সবজি চাষের সারের প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা কর । 

৪. জমিতে সেচের সঠিক সময় কিভাবে নির্ণয় করা যায় তা ব্যাখ্যা কর। 

৫. সবজি চাষে আগাছা দমণের পদ্ধতিগুলো বর্ণনা কর।

Content added By
Promotion